Sunday, April 23, 2017

নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর লেখা থেকে :-

* "আমার বাবা, জানকীনাথ বসু, গত শতাব্দীর নবম দশকে উড়িষ্যায় চলে যান এবং ওকালতিসূত্রে কটকে বসবাস করতে থাকেন। সেখানে 1897 খৃষ্টাব্দের 23 শে জানুয়ারি শনিবার আমার জন্ম হয়। আমার বাবা মাহীনগরের বসু বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ;আর মা প্রভাবতী হাটখোলার দত্ত পরিবারের কন্যা। আমি আমার বাবা-মা'র ষষ্ঠ পুত্র ও নবম সন্তান। আজকালকার এই দ্রুতগতি যানবাহনের যুগে, কলকাতা থেকে রেলে চড়ে পূর্ব উপকূল বরাবর দক্ষিণাভিমুখী গেলে এক রাত্রেই কটকে পৌঁছান যায় ;এবং এই ভ্রমণে না আছে কোনও দু:সাহসিকতা, না কোন রোমাঞ্চ। কিন্তু ষাট বছর পূর্বে অবস্থা ঠিক এরকম ছিল না। গরুর গাড়ী করে যেতে হত এবং পথে চোরডাকাতের উপদ্রব ছিল ;আর সমুদ্রপথে গেলে বাত্যাবিক্ষুব্ধ তরঙ্গরাশির সম্মুখীন হতে হত। যেহেতু মানুষ অপেক্ষা ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখা অনেক নিরাপদ, সেজন্য সাধারণত সকলে নৌকাযোগেই যাতায়াত করত। সমুদ্রগামী নৌকা যাত্রীদের নিয়ে চাঁদবালী পর্যন্ত যেত ;সেখান থেকে স্টীমারে চড়ে অনেক নদী ও খাল অতিক্রম করে কটকে পৌঁছুতে হত। এই জলপথে যাত্রাকালে যেরকম গড়াগড়ি খেতে ও ঝাঁকুনি সহ্য করতে করতে যেতে হত এবং আনুষঙ্গিক আরও যে সব কষ্ট ভোগ করতে হত তার যে বিবরণ শিশুকাল থেকে মা'র কাছে শুনে এসেছি, তার ফলে এ ধরনের অভিজ্ঞতা লাভের কোনও ইচ্ছাই আমার হত না। যখন দূরত্ব বেশি ছিল এবং যাতায়াত ব্যবস্থা কোনও প্রকারেই নিরাপদ ছিল না তখন ভাগ্যান্বেষণে দেশত্যাগ করে দূরবর্তী স্থানে যাওয়া অবশ্যই আমার বাবার বিপুল সাহসের পরিচয়। সামাজিক জীবনেও সাহসী ব্যক্তিদের প্রতিই ভাগ্য সুপ্রসন্ন হন;আমার যখন জন্ম হয় তখন এই নূতন স্থানে ইতিমধ্যেই আমার বাবা নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন, এবং সেই সঙ্গে প্রায় অগ্রগণ্য এক আইনব্যবসায়ীরুপে স্বীকৃতি অর্জন করেছেন।"(সুভাষচন্দ্র বসু সমগ্র রচনাবলী, প্রথম খণ্ড থেকে উদ্ধৃত)*